,

আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে বিএনপি নেতার প্রচারণা

জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে এলাকায় পোস্টার, বিলবোর্ড টানানোর ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ভুয়া পদ ব্যবহার করে রাতারাতি তিনি আওয়ামী লীগ নেতা সেজে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে, বিএনপি নেতা ফিরোজ খানের আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করায় ফরিদপুরের ৪নং আমলি আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য মো. বাবুল আক্তার।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ফিরোজ খান এলাকায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তিনি কয়েকবার বিএনপির সমর্থন নিয়ে তালমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। হঠাৎ করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, বিলবোর্ড টাঙিয়েছেন; যা বিএনপি নেতার প্রতারণা।

তাদের অভিযোগ, বিগত ২০১৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কমিটি গঠন করা হয় সে কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন নির্বাচিত হন। তারা হলেন- মো. জামাল হোসেন মিয়া, মো. রওশন আলী ও মো. লিয়াকত আলী। এরপর সম্মেলন না হওয়ায় সেই কমিটিই বহাল রয়েছে।

এদিকে, ২০১৫ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যে কমিটি অনুমোদন দেন সেই কমিটির ৪নং উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন ফিরোজ খান। দল থেকে পদত্যাগ না করে অন্য দলের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করায় ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে গণমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির বর্তমান উপদেষ্টা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অর্ধডজন মামলার আসামি ফিরোজ খান সম্প্রতি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভুয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করে পোস্টার, বিলবোর্ড লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এলাকায় নিরীহ জনগণ, ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় অংশ নেন। তালমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।

চিঠিতে বলা হয়, ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা ও মামলার অভিযোগ রয়েছে। তার হামলা ও মামলার কারণে অনেক আওয়ামী লীগের কর্মী এলাকা ছাড়া।

এদিকে আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করায় ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের ৪নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে গত ২৭ মার্চ একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় ফিরোজ খানকে একমাত্র আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আক্তার। মামলার আর্জিতে তিনি ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগ আনেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা জানান, আমাদের কাছে যে ডকুমেন্ট রয়েছে তাতে ফিরোজ খান স্থানীয় বিএনপির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের চিঠি পাওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ফিরোজ খান বলেন, আমি ২০১৬ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি, সেটি কমিটি অ্যাকসেপ্ট করেছে। তারপর ২০১৬ সালে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে আসলে তখন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করি।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা হয়েছে সেটি লোক মারফত শুনেছি। আর আমার বিরুদ্ধে মাত্র একটি মামলা রয়েছে, সেটি মিথ্যা মামলা। এছাড়া এলাকায় কেউ বলতে পারবে না যে, আমি কাউকে হুমকি ধমকি দিয়েছি। আমাকে হেয় করতে অনেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর